রাতারগুল: জলমগ্ন অরণ্যে একদিন
Tuesday, December 15, 2015
Unknown
, Posted in
bangladesh tour
,
ratargul
,
ratargul swam forest
,
ratargul sylhet
,
ratergul travel
,
swam forest of bangladesh
,
sylhet tour
,
the swam forest
,
travel in sylhet
,
travel information
,
0 Comments
শুভ সালাতিন
পর্যটক,লেখক ও আলোকচিত্রী
১৬/১২/১৫,ঢাকা
বিছানাকান্দি থেকে যখন রাতারগুলে আসলাম তখন সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু । ছোট ঘাট। লোকজন তেমন নেই। ঘোটা পাচেক নৌকা ভীড়ে আছে। দরকষাকষি চলছে। এক কোনায় বেশ কয়েকজন দোহাতি লোক মাছের টুকলি নিয়ে বসে আছে। আমাদের তিনটি নৌকা দরকার। নৌকাগুলো দেশী নৌকার মতো। পার্থক্য শুধু দৈর্ঘ্যে। বেশ লম্বা। লগি-বৈঠায় চলে। তিনটি নৌকা ভাড়া করলাম। ভাড়া সর্বমোট ১৫০০ টাকা। একটু বেশীই মনে হলো। কি আর করা, শখের দাম তো লাখ টাকা।
কালো পানির উপর দিয়ে ধীরে ধীর এগিয়ে চললো নৌকা। রাতারগুল বনে প্রবেশ করতে আরও প্রায় মিনিট বিশেক সময় লাগবে। আপাতত আমরা নদীতে আছি। এই অবসরে প্রিয় পাঠক আসুন, রাতারগুল সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে আসি।পর্যটক,লেখক ও আলোকচিত্রী
১৬/১২/১৫,ঢাকা
বিছানাকান্দি থেকে যখন রাতারগুলে আসলাম তখন সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু । ছোট ঘাট। লোকজন তেমন নেই। ঘোটা পাচেক নৌকা ভীড়ে আছে। দরকষাকষি চলছে। এক কোনায় বেশ কয়েকজন দোহাতি লোক মাছের টুকলি নিয়ে বসে আছে। আমাদের তিনটি নৌকা দরকার। নৌকাগুলো দেশী নৌকার মতো। পার্থক্য শুধু দৈর্ঘ্যে। বেশ লম্বা। লগি-বৈঠায় চলে। তিনটি নৌকা ভাড়া করলাম। ভাড়া সর্বমোট ১৫০০ টাকা। একটু বেশীই মনে হলো। কি আর করা, শখের দাম তো লাখ টাকা।
রাতারগুলে ভ্রমণকারী |
রাতারগুল সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় । এই জলজ বনভ’মি বছরের অর্ধেক সময় কোমর পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। আয়তন প্রায় তিনহাজার তিনশত একুশ একর। এর মধ্যে ৫০০ একর মূল বনভ’মি এবং বাকি অংশ জলাশয় এবং কিছু উচু এলাকা।
বর্ষাকালে ডুবে যায় পুরো এলাকা আর শীতকালে শুধু খনন করা জলাশয় ছাড়া বাকী এলাকা শুকিয়ে যায়। ২০১০-২০১১ সালে পাখির নিরাপদ আবাসন হিসাবে প্রায় ৩.৬ বর্গকিলোমিটারের একটি বড় লেক খনন করে সিলেট বনবিভাগ। রাতারগুলে ভ্রমণকারী |
রাতারগুলে পানির গভীরতা বেশ গভীর।কোথাও তা ২৫ ফুটেরও বেশী। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে রাতারগুল বনভ’মি। তারপরেও বনবিভাগ লাগিয়েছে বরুন,করচ,হিজল ও মুর্তাসহ আরও বেশ কিছু জলসহিষ্ণু গাছ। কদম,জালি বেত, অজুর্ণ সহ প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ দেখা যায়।
সিলেটের বিখ্যাত শীতল পাটির মূল উপাদান মূর্তার বড় অংশও আসে এই বন থেকে।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বনবিভাগ রাতারগুলের ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসাবে ঘোষনা দেয়। কাঠবিড়াল,উদবিড়াল,বানর,মেছোবাঘ ছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির সাপ।
নানা প্রজাতির পাখি দেখা যায় রাতাগুল বনে-পানকৌডি,ঘুঘু,বালিহাসঁ,ফিঙে আর বিভিন্ন প্রজাতির বক।
নদীর কালো পানি ভেত করে এগিয়ে চলছে আমাদেও তিন নৌকা। হঠাৎ বায়ে বাক নিলো আমাদের প্রথম নৌকা। মাঝি বলল,“ এবার আমরা বনে ঢুকুম”। আমাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিল। বনের প্রথমেই দেখা গেল মুর্তা গাছ। গাছগুলোর অর্ধেক অংশ পানির নীচে নিমজ্জিত। বাকী অংশ পানির উপরে।চারদিকটা ভীষণ নীরব। আমাদের নৌকা ছাড়া আর কোন নৌকা চোখে পড়লো না । ধীরে ধীরে বনের ভিতরে প্রবেশ করলাম । চারদিকে নাম না জানা গাছ পানির উপর ডালপালা মেলে দিয়েছে।
মাথার উপর ডালপালা যেন চাদোয়া বিছিয়ে দিয়েছে। মাথার উপর ডালপালা । একটু দাড়ালেই গায়ে লাগবে। সূর্যের আলো না আসতে পারায় কেমন যেন গা-ছমছমে আবহ তৈরী হয়েছে। মাথার উপরে যখন ডালপালা ধীর লয়ে সরে যাচ্ছে, তখন সভয়ে উপরে তাকাই । এই বুঝি সাপ ঝুলছে! । রাতারগুলে আসার আগে অনেকে বলেছিল, এখানে নাকি গাছের ডালে ডালে সাপ দেখতে পাওয়া যায় । কিন্তুু, আমাদের কপাল খারাপ। কোন সাপ বাবাজির দেধা পেলাম না এ যাত্রায়। মাঝিকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানালো,“ আগে আছিলো, অহন মানুষের আনাগোনা বাড়ছে, হাপ পাইবেন কনে?”। আগে যে বনভ’মি একদা ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে, তা এখন মানুষের পদচারনায় মুখরিত। পানিতে ভেসে আছে, চিপসের প্যাকেট, খালি পানির বোতল,কলার খোসা। বেশ কয়েকটা নৌকা আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল ঘাটের দিকে। সূর্য ডুবে গেছে। আমাদের সহযাত্রীরা তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রিব । মাঝিরা অভয় দিলো। এই তো সামনে আর কিছু দুর গেলেই ওয়ার্চ টাওয়ার । কিন্তুু মনের মধ্যে কুডাক দিল। না এখনই ফিরতে হবে। রাতের বেলা এই রাতারগুলে নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না । তাই দিনের আলো থাকতে থাকতেই ফেরা সমুচিত। তাই ফিরে চললাম ঘাটের পানে, সাথে নিয়ে চললাম রাতারগুলের জন্য একরাশ ভালবাসা।
শুভ সালাতিন : লেখক ও আলোকচিত্রী, ছবি : অনন্যা |
অশ্বত্থের সন্ধ্যার হাত্তয়া যখন লেগেছে নীল বাংলার বনে
মাঠে মাঠে ফিরি একাঃ মনে হয় বাংলার জীবনে স্কংট
শেষ হয়ে গেছে আজ;-চেয়ে দ্যাখো কতো শত শতাব্দীর বট
হাজার সবুজ পাতা লাল ফুল বুকে ল’য়ে শাখার বাজনে
আকাংখার গান গায়- অশ্বত্থেরা কি যেন কামনা জাগে মনে:
-জীবনানন্দ দাশ
কিভাবে যাবেন
প্রথমে সিলেট শহরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে সড়কপথে,রেলপথে কিংবা আকাশপথে সিলেট আসতে হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সিলেটে আসা যায়।
বাস ছাড়ে
মহাখালী, ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ
এসি বাস: গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম,শ্যামলী ও এনা পরিবহন ।
ভাড়া: ৮০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা ।
নন-এসি বাস: শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ,ইউনিক সার্ভিস,এনা পরিবহন ।
ভাড়া: ৪০০ টাকা-৪৫০ টাকা
ট্রেন: কমলাপুর থেকে
পারাবাত এ∙প্রেস-৬ টা ৪০ মিনিটে। ( মঙ্গলবার বাদে)
জয়ন্তিকা এ∙প্রেস-প্রতিদিন দুপুর ২ টায়
উপবন এ∙প্রেস-রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে ( বুধবার বাদে)
কালনী এ∙প্রেস-বিকাল ৪ টায় ( শুক্রবার বাদে)
ট্রেন : চট্টগ্রাম থেকে
পাহাড়িকা এ∙প্রেস-সকাল ৮ টা ১৫ ( সোমবার ছাড়া)
উদয়ন এ∙প্রেস-রাত ৯ টা ৪৫ ( শনিবার ছাড়া)
আকাশপথে : ঢাকা থেকে
শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেট যায়-নভোএয়ার, ইউ.এস বাংলা,ইউনাইটেড এয়ার।
রাতারগুলে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস ভাড়া পাওয়া যায়। যদি বাজেট ভাল থাকে, তাহলে এই ধরনের যানবাহন ভাড়া নিতে পারেন। আর যদি বাজেট টাইট হয়, তাহলে আম্বরখানা, শাহজালাল মাজার থেকে সাহেব বাজার কিংবা চৌমুহনি পর্যন্ত লোকাল অটো রিক্শা ভাড়া নিতে পারেন। চৌমুহনী থেকে হাতের বায়ে ১ কিলোমিটার গেলেই রাতারগুল। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা । অবশ্য রির্জাভ নিলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
রাতারগুলে ভ্রমণ করার জন্য ছোট ছোট খোলা নৌকা ভাড়া নিতে হবে। দরকষাকষি করা ভাল। নৌকা ভেদে ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সাবধানতা: রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র জলজ বনভ’মি । নৌকায় ভ্রমনকালে পানিতে কোন পলিথিন কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলবেন না । সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। সাপ কিংবা জোঁক থেকে সাবধান । গাছের ডালে সাপের আনা গোনা থাকতে পারে। কপাল ভাল বা খারাপ থাকলে সাপের দেখা পেতেও পারেন। আমি কিন্তুু দেখিনি। নৌকায় পাঁচজনের বেশী উঠবেন না । উল্টে যেতে পারে। ছাতা অবশ্যই রাখবেন।
প্রথমে সিলেট শহরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে সড়কপথে,রেলপথে কিংবা আকাশপথে সিলেট আসতে হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সিলেটে আসা যায়।
বাস ছাড়ে
মহাখালী, ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ
এসি বাস: গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম,শ্যামলী ও এনা পরিবহন ।
ভাড়া: ৮০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা ।
নন-এসি বাস: শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ,ইউনিক সার্ভিস,এনা পরিবহন ।
ভাড়া: ৪০০ টাকা-৪৫০ টাকা
ট্রেন: কমলাপুর থেকে
পারাবাত এ∙প্রেস-৬ টা ৪০ মিনিটে। ( মঙ্গলবার বাদে)
জয়ন্তিকা এ∙প্রেস-প্রতিদিন দুপুর ২ টায়
উপবন এ∙প্রেস-রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে ( বুধবার বাদে)
কালনী এ∙প্রেস-বিকাল ৪ টায় ( শুক্রবার বাদে)
ট্রেন : চট্টগ্রাম থেকে
পাহাড়িকা এ∙প্রেস-সকাল ৮ টা ১৫ ( সোমবার ছাড়া)
উদয়ন এ∙প্রেস-রাত ৯ টা ৪৫ ( শনিবার ছাড়া)
আকাশপথে : ঢাকা থেকে
শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেট যায়-নভোএয়ার, ইউ.এস বাংলা,ইউনাইটেড এয়ার।
রাতারগুলে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস ভাড়া পাওয়া যায়। যদি বাজেট ভাল থাকে, তাহলে এই ধরনের যানবাহন ভাড়া নিতে পারেন। আর যদি বাজেট টাইট হয়, তাহলে আম্বরখানা, শাহজালাল মাজার থেকে সাহেব বাজার কিংবা চৌমুহনি পর্যন্ত লোকাল অটো রিক্শা ভাড়া নিতে পারেন। চৌমুহনী থেকে হাতের বায়ে ১ কিলোমিটার গেলেই রাতারগুল। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা । অবশ্য রির্জাভ নিলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
রাতারগুলে ভ্রমণ করার জন্য ছোট ছোট খোলা নৌকা ভাড়া নিতে হবে। দরকষাকষি করা ভাল। নৌকা ভেদে ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সাবধানতা: রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র জলজ বনভ’মি । নৌকায় ভ্রমনকালে পানিতে কোন পলিথিন কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলবেন না । সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। সাপ কিংবা জোঁক থেকে সাবধান । গাছের ডালে সাপের আনা গোনা থাকতে পারে। কপাল ভাল বা খারাপ থাকলে সাপের দেখা পেতেও পারেন। আমি কিন্তুু দেখিনি। নৌকায় পাঁচজনের বেশী উঠবেন না । উল্টে যেতে পারে। ছাতা অবশ্যই রাখবেন।
0 Response to "রাতারগুল: জলমগ্ন অরণ্যে একদিন "
Post a Comment