Coronavirus survivor stories

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা কয়েকজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা


১.  সাউথ কোরিয়ার প্রকৌশল বিদ্যার অধ্যাপক পার্ক হাইয়ূন (বয়স ৪৭) তার সু-স্বাস্থ্য
উপর এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, করোনা ভাইরাস তাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। কিন্তুু বিধি বাম। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন তিনি । ভাইরাসের সমস্ত লক্ষন দেখা গেল তার শরীরে। বুশানের দক্ষিণাঞ্চলে এক হাসপাতালের  ইন্টটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হলো তাকে।

জনাব পার্ক হাইয়ূনের ভাষ্যমতে শুরুতে তার শুষ্ক কাশি ও গলাতে খুশখুশে ভাব ছিল । কয়েকদিন পরে শ্বাস-কষ্ট শুরু হলো। এই শ্বাস-কষ্ট এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, এক হাসপাতালে করোনা ভাইরাস টেষ্ট করার জন্য যখন অপেক্ষা করছিলেন, তখন তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। টেষ্টের ফলাফল পজিটিভ আসলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিন তার শারিরিক অবস্থা
এতটাই উথাল-পাথাল ছিল যে, তিনি মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন।

ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন ‘ আমি যেন রোলার কোষ্টারে চেপেছি। আমার বুকের উপর কোন ভারী প্লেট ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে এবং হাজারটা সূঁই-এর আগা ঢুকছে আমার বুকের চামড়া ভেদ করে ’। তিনি মনে করেছিলেন এই অনূভূতিগুলো হয়তো কোভিড-১৯ চিকিসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।

টানা আট দিন পরে দুটো টেষ্টের ফলাফল নেগেটিভ আসলে তাকে হাসপাতাল থেকে ডির্সচার্জ করা হয়।
পার্ক বলেন, ‘ আমার অবস্থা আসলেই খুব খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল আমার অন্তিমকাল উপস্থিত
এবং আমার অবশ্যই কিছু লিখে যাওয়া উচিত। আর সে কারনে আমি বন্ধু-বান্ধব ও  আত্মীয়-স্বজনকে আমার এই অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য ফেইসবুকে কিছু কথা লেখার চেষ্টা করি ’।

২.  ফেবিও বাইফেরালী, বয়স ৬৫, পেশায় কার্ডিওলজিষ্ট পুরো আটদিন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন কোভিড-১৯-তে আক্রান্ত হয়ে। রোমের Policlinico Umberto I hospital ভর্তি হোন । ভয়াবহ যন্ত্রণা
কে তিনি ‘অদ্ভুত’ বলে ব্যাখা করেছেন। তার সারাক্ষণ মনে হয়েছে একটা ছোট বানর যেন তার পিঠের সাথে সবক্ষণ লেগে আছে।

অক্সিজেন থেরাপী ছিল কষ্টদায়ক, রেডিয়াল আর্টারী খুজে পাওয়াও ছিল কঠিন। তিনি বলেন,‘ দিনে এক থেকে দুইবার আমাকে থেরাপী দেওয়া হতো। আমি নিজে চিকিসক বলেই এই অমানুষিক কষ্ট সহ্য করেছিলাম। অন্য রোগী হলে চিৎকার করে বলতো ‘আর-না!’ ‘আর-না’ ।

রাতগুলো ছিল সবচেয়ে কষ্টকর। ভয় ও একাকিত্ব তাড়া করে ফিরতো।
‘আমি ঘুমাতে পারতাম না, হাসপাতালের রুমে উদ্বেগ-উৎক›ঠা,দু:স্বপ্ন আর মৃত্যু ভয় ভর করতো আমার উপর।’ বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন,‘ আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ছাড়া আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে, কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। হাতাশার সাগরে ডুবে যাচ্ছিলাম আমি’।

হাসপাতালের মেডিকেল ষ্টাফরা পা-থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক পোষাকে আবৃত হয়ে রুমে আসতো। বাইফেরালী বলেন,‘ গ্লাস মাস্কের পিছনে আমি দেখেছি তাদের ভালবাসাপুর্ণ দৃষ্টি এবং তাদের কণ্ঠস্বর ও ছিলো প্রীতিকর। তাদের বেশীর ভাগই ছিল তরুণ ও সম্মুখ যোদ্ধা । আশার আলোকবর্তিকা তাদের হাতে’।

৩. মারিশাল সান রোমান, আর্জেন্টিনার ছাত্রী । তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন এবং একে ‘পরিপূর্ণ একাকিত্ব’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এই তরুণীর ধারণা তিনি খুব সম্ভবত মাদ্রিদে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হোন ইনষ্টিটিউটো ডে ইম্পপ্রেসো বিজনেস স্কুলের বিদায়ী নৈশভোজের অনুষ্ঠান থেকে। নৈশভোজ অনুষ্ঠান শেষে তিনি আজেন্টিনায় ফিরে আসেন। 
বাড়ীতে এসে একা হয়ে পড়েন। সকলে এড়িয়ে চলত তাকে। নিজের রুমে একাকি কাটতে থাকে রাত-দিন। দরজার ও পাশে খাবার রেখে চলে যেতেন তার পিতা।

স্কাইপিতে স্থানীয় একটি  মিডিয়াতে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলে তা মুহুুর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসার জন্য অনেকে তাকে তীব্র সমালোচনা করে।

চলবে...

0 Response to "Coronavirus survivor stories"

Post a Comment